কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ওয়াহিদুজ্জামান অর্ক
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার রক্তাক্ত জনপদ নামে খ্যাত আব্দালপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর গা ঘেঁষা। সেখানে প্রতি বছরেই দফায় দফায় ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। এতে আহতসহ প্রাণ হারায় এলাকার নিরহ মানুষ। এতে আটক হয় অনেকেই কিন্তু ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায় গডফাদাররা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) ও জাসদ গণবাহিনীর কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা আবার ওই এলাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা স্থানীয় গডফাদারদের আশ্রয়ে রাতে এলাকায় মহড়া দিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে নতুন করে আতংক সৃষ্টি করছে। অবশ্য ইতিমধ্যে বেশকিছু সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে ও প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন। এই এলাকার উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসীর মধ্যে জাসদ গণবাহিনীর আলাল ডাক্তার কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন।
এছাড়া জাসদ গণবাহিনীর আয়নাল ভারতে নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে নিহত হয়। বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা)'র নবীসদ্দিনকে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসীরা ঝিনাইদহ হরিনাকুন্ড উপজেলার দবিলা ব্রিজ ঘাটে গুলি করে হত্যা করে। বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা)'র রহমান কে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসীরা দিনের বেলায় লক্ষীপুর কলার হাঁটে কুপিয়ে হত্যা করে। জাসদ গণবাহিনীর রইচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কিন্তু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে জাসদ গণবাহিনীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী আলী রেজা সিদ্দিকী বুলবুল ওরফে কালু। এখনো তার অশুভ ছায়া পড়ে আব্দালপুরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হার মেনে অধিকাংশ সন্ত্রাসী তৎকালীন আওয়ামীলীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তখন থেকেই দুর্বল হয়ে পড়ে সন্ত্রাসী দুই সংগঠন বীপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) ও জাসদ গণবাহিনী। এর মধ্যে জাসদ গণবাহিনীর কিছু সন্ত্রাসী পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় পাশ্ববর্তী ভারতে। ওই সব সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে সেখানে বসেই। আর এদের প্রতিরোধের নামে এলাকায় সামাজিক দুই দলে সৃষ্টি হয়। এই দুই দলের মধ্যে মাঝেমধ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শুরু হয় গ্রাম্য যুদ্ধ। এতে প্রাণ হারায় গ্রামের দিনমজুর কৃষক শ্রেণীর মানুষ। এই গ্রাম্য যুদ্ধ বন্ধ করতে পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু তাদের থামানো যেন অসম্ভব হয়ে পড়ছে । আর দুই দলের নেতৃত্ব দেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এর ফলে গ্রাম্য যুদ্ধ যেনো কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছিল না।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আব্দালপুর গ্রাম্য যুদ্ধে নিহত হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হালিমের পিতা। এতে বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়। আর এই গ্রাম্য যুদ্ধ বন্ধ করতে পুলিশ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতেও কোন লাভ হয়নি।
এদিকে গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু হয আব্দালপুরে। এই অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ দুই পক্ষের ৫ জন আটক হয় বলে জানা যায়। আটককৃতদের মধ্যে পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের মৃত মসলেম মন্ডলের ছেলে ইকবাল, মৃত আক্কাস আলীর ছেলে ফিরিদ, মৃত ইবাদত আলীর ছেলে নজরুল এরা ইউপি চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন চেয়ারম্যানের গ্রুপের। এছাড়াও আটক হয়েছেন অপর গ্রুপের ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির আরব আলীর ছেলে কুরবান আলী।
তল্লাশি চালানো হয় জেলা যুবলীগ নেতা আনিচুর রহমান বিকাশ, সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু, ইউপি চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আরব আলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আনিচুর রহমান আনিচ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিমসহ বেশ কিছু বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। পুলিশের এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।